নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন: ৬৫ শতাংশ হতে যাচ্ছে লিখিত, ৩৫ শতাংশ কার্যক্রম ভিত্তিক
নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার সামষ্টিক মূল্যায়নের লিখিত অংশের ওয়েটেজ হতে যাচ্ছে ৬৫ শতাংশ। আর কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ হবে ৩৫ শতাংশ। সম্প্রতি মূল্যায়নের বিষয়ে এ–সংক্রান্ত কমিটি যে সুপারিশ করেছিল, তা থেকে কিছুটা পরিবর্তন এনে লিখিত অংশের ওয়েটেজ বাড়ানোর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ নিয়ে আলোচনা ও প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। সভায় মন্ত্রণালয়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ড, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রতি নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ও মূল্যায়নপদ্ধতি চূড়ান্তকরণের কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি যে চূড়ান্ত সুপারিশ করেছিল, তাতে কার্যক্রমভিত্তিক অর্থাৎ হাতে-কলমে মূল্যায়নের ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ আর লিখিত অংশের ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ করতে বলেছিল। কার্যক্রম বলতে বোঝানো হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্ট করা, উপস্থাপন, অনুসন্ধান, প্রদর্শন, সমস্যার সমাধান করা, পরিকল্পনা প্রণয়ন ইত্যাদি। আরও সহজ করে বললে হাতে-কলমে কাজ।
আজকের বৈঠকে উপস্থিত দুজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তাঁদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈঠকে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাবলিক পরীক্ষা অর্থাৎ এসএসসি পরীক্ষায় লিখিত অংশের ওয়েটেজ ৬৫ শতাংশ এবং কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ হবে ৩৫ শতাংশ। প্রথম বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ধাপে ধাপে কার্যক্রমভিত্তিক অংশের ওয়েটেজ বাড়ানো হবে। লিখিত অংশের প্রশ্নপত্র হবে কার্যক্রমের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল রেখে অর্থাৎ প্রশ্ন হবে দুই অংশের মধ্যে আন্তসম্পর্ক বজায় রেখে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন এনসিটিবি দ্রুত আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করলে এটিকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পূর্বনির্ধারিত জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় তোলা হবে।
জানা গেছে, ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী লিখিত ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন মিলিয়ে সময়টি পাঁচ ঘণ্টাই রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী দশম শ্রেণি শেষে যে পাবলিক পরীক্ষা হবে, সেটির নাম এখনকার মতো মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষাই রাখা হচ্ছে। এ পরীক্ষা হবে শিক্ষা বোর্ডগুলোর অধীনে।
এনসিটিবির উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা আজ প্রথম আলোকে বলেন, লিখিত অংশের ওয়েটেজ ৬৫ শতাংশ করা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি। আরেকটু পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে।
দেশে গত বছর নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়। বর্তমানে প্রাথমিকে প্রথম থেকে তৃতীয় এবং ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমে অধ্যয়ন করছে। পর্যায়ক্রমে ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে চালু হবে নতুন শিক্ষাক্রম।
কিছুদিন ধরেই নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন কেমন হবে, সেটি নিয়ে আলোচনা চলছে। আজকের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে নবম শ্রেণির সামষ্টিক বা বার্ষিক মূল্যায়নটি পাবলিক পরীক্ষার আদলে নেওয়ার। তবে অন্যান্য শ্রেণির মূল্যায়ন এখনকার মতোই চলতে থাকবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন যে মূল্যায়নটি দ্রুত চূড়ান্ত করা উচিত। কারণ, বর্তমানে যারা নবম শ্রেণিতে পড়ে, তারা নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রথমবারের মতো এসএসসি পরীক্ষা দেবে। নবম শ্রেণিতে তাদের অধ্যয়নকাল পাঁচ মাস চলছে। কিন্তু তাদের এসএসসি পরীক্ষার মূল্যায়ন কেমন করে হবে, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অবশ্য নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা হবে দশম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের ভিত্তিতে।
Comments
Post a Comment